ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনে আমিন বাজারে নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমিন বাজারে নির্মিত হতে যাচ্ছে এই বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট।

শনিবার আমিনবাজারে ডিএনসিসি’র যান্ত্রিক ওয়ার্কশপ ও ল্যান্ডফিল পরিদর্শন করে এ তথ্য জানান।
যান্ত্রিক ওয়ার্কশপ পরিদর্শন শেষে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি’র বিভিন্ন ধরনের আমদানিকৃত যান ও যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কিনা তা পরিদর্শন করতে এখানে আসা। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বর্তমান যন্ত্রপাতির পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হবে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কাওরান বাজারের কাঁচাবাজার আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়িতে স্থানান্তরের কথা ছিল। কিন্তু কাজটি আমরা এখনও করা যায়নি। এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে প্রাথমিকভাবে কথা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সাথে আবারও বৈঠক হবে। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক ধরনের দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু দাবিগুলো লিখিত আকারে দিচ্ছেন না।
মেয়র বলেন, কাওরান বাজারের মতো একটা বিশৃঙ্খল মার্কেট ঢাকা শহরে হতে দেয়া যায় না। কাওরান বাজারকে সুন্দর ডিজাইন অনুযায়ী সাজানো দরকার।
মেয়র বলেন, আমাদের প্রায় ৪৫০টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি আছে। এর মধ্যে অ্যাস্কেভেটর, পানির গাড়ি, ময়লার ডাম্প ট্রাক রয়েছে। এগুলো কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে। ময়লা ফেলে আসার পরে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কিনা। আমরা এসফল্ট প্ল্যান্ট করেছি।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারদের বলা হয়েছে ভবিষ্যতে এই এসফল্ট প্ল্যান্ট থেকে তাদের ম্যাটেরিয়াল কিনতে হবে। নগরে যে কাজ হবে তার কোয়ালিটি নিশ্চিত করার জন্য এই এসফল্ট প্ল্যান্ট করা হয়েছে।

এ সময় মেয়র জানান, কুরবানির ঈদের সময় গরুর হাটের পাশে একটি আধুনিক স্লটারিং হাউজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি অনুশাসন দিয়েছেন। সেই অনুশাসনটিকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেয়া হচ্ছে। গাবতলী গরুর হাটের পাশে আমরা একটি অত্যাধুনিক স্লটারিং হাউজ করবো।
৫২ একর জমি সম্পর্কে আতিকুল ইসলাম বলেন, এই জমি প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক উদ্ধার করেছিলেন। এটি কোথাও কোথাও আবার দখল হয়ে গিয়েছে। এসব জায়গা পুণরুদ্ধারের পর সীমানা প্রাচীর করে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।
যান্ত্রিক ওয়ার্কশপ পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী ও মেয়র আমিনবাজার ল্যান্ডফিল পরিদর্শনে যান।
পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী বলেন, আমিন বাজারে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপিত হলে ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাট এবং খাল-বিলসহ যেখানে সেখানে ময়লা পড়ে থাকবে না। বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপিত হলে সেখানে প্রতিদিন তিন হাজার টন ময়লা-আবর্জনা প্রয়োজন হবে। এত পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট দিতে হবে। তাতে ঢাকা শহরের ময়লা-আবর্জনার স্তুপ আর থাকবে না।
বিদেশি একটি কোম্পানির সাথে চুক্তির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চুক্তি হওয়ার ১৮ মাসের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। যদিও তারা এর থেকে কিছুটা সময় বেশি চেয়েছেন। চুড়ান্ত চুক্তির সময় এই বিষয়টি ফয়সালা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
পরিবেশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের পাশে একটি ইকো পার্কও নির্মাণ করা হবে।
আমিন বাজার ল্যান্ডফিল পরিদর্শন শেষে মেয়র বলেন, এই ল্যান্ডফিলকে একটি সুন্দর একটা সিস্টেমের মধ্যে আনা দরকার। এটির মেয়াদ ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিল। এরপর একে ভার্টিক্যালি উপরের দিকে ৬০ ফুট নেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পরে এখানে আর ময়লা ফেলার জায়গা থাকবে না। ঢাকা শহরের প্রতিদিন যে আবর্জনা তৈরি হয়, আমাদের এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে ২০২২ সাল থেকে কোথায় ময়লা ফেলা হবে। এখানে জমি অধিগ্রহণ করে একটি ইকো পার্ক তৈরি করা হবে।
তিনি জানান, এখন ময়লা লিনিয়ার ইকোনমিতে ফেলা হয়। ভবিষ্যতে সার্কুলার ইকনোমিতে ফেলা হবে। সে ক্ষেত্রে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস উৎপাদন হবে। এখানে ৮০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, জৈব সার ইত্যাদি উৎপাদন করা হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে বলে মেয়র আতিক উল্লেখ করেন।